Skip to main content

এক বর্ণময় ব্যক্তিত্ব (A Colourful Personality)
সমর চন্দ্র দে
Website : www.mathwithsamar.blogspot.com

তিনি ছিলেন বর্ণময় চরিত্রের অধিকারী। তিনি নিজের
গিরোলামো কারদানো { Gerolamo Cardano} (1501-1576)  খ্রীস্টাব্দ
আত্নজীবনীমূলক গ্রন্থ দ্য ভিতা প্রপিয়া  লিবের (De Vita Propria liber)  এ নিজের সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তিনি
ছিলেন বদমেজাজি, কলহপ্রিয়, একরোখা, ধূর্ত, কুটিল, ফন্দিবাজ, ঠোঁটমোটা, পরিশ্রমী, জেদী, অধৈর্য্য, লোভী এবং সর্বোপরি মিথ্যেবাদী।যিনি নিজেকে এরূপে বর্ণনা করতে পারেন, তিনি ঘোড়েল হতে পারেন, কিন্তু তার সত্যবাদীতা নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। এই বর্ণনা থেকে একটি   জিনিস বোঝা যায় যে তার বন্ধু না থাকলেও শত্রুর অভাব ছিল না। এই প্রসঙ্গে গণিতজ্ঞ নিকলো তার্তাগলিয়া (Niccolo Tartaglia) সঙ্গে তাঁর ঝগড়া গণিতজ্ঞ মহলে স্মরণীয় হয়ে আছে।  গণিতজ্ঞ নিকালো ফোন্তানা তার্তাগলিয়া (Niccolo Fontana Tartaglia) ভীষণ তোতলা ছিলেন। ইতালিয়ান ভাষায় যাকে বলা হত তার্তাগলিয়া  (Tartaglia)তাই সবাই তাঁকে নিকলো তার্তাগলিয়া (Niccolo Tartaglia)  বলে ডাকতেন। এই বিখ্যাত ঝগড়ার বর্ণনা পরে আলোচিত হবে।
1501 সালের 24 শে সেপ্টেম্বর ইতালির পাভিয়া শহরে মাতা চিয়ারা মেচেরি এর গর্ভে এই মহান গণিতজ্ঞ  ও পদার্থবিদের জন্ম হয়। পিতা ফাজিয়ো কারদানো ছিলেন আইন ব্যবসায়ী। কিন্তু গনিত ছিল তার  ধ্যানজ্ঞান, সঙ্গে ছিল কিছু আদি ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার। যেমন জ্যোতিষ মন্ত্রতন্ত্র, সন্মোহন বিদ্যা ইত্যাদি।
ফাজিয়োর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন বিখ্যাত চিত্র শিল্পী লিওনার্দো দ্য  ভিঞ্চিভিঞ্চি তাঁর কাছে নিতেন জ্যামিতি র পাঠ। কিন্তু কেন? পেইন্টিং এ যাকে বলে পারস্পেকটিভ সমসার সমাধান করা। পারস্কেকটিভ বিষয়টি কি? ক্যানভাসে আঁকা ছবিতে কাছের আর দূরের বস্তুর তফাৎ বোঝানো।  যেমন ধর তুমি আঁকছ, একজন লোক দৌড়াচ্ছে, সে দৌড়ে বহুদূরে চলে  গিয়েছে তা তুমি কিভাবে বোঝাবে? তুমি লোকটির শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গের আকার আনুপাতিক হারে হ্রাস করবে, তা করবে যে জ্যামিতিক ধরনা থেকে, তাকেই বলা হবে পারস্পেকটিভ ওই ধারনা  ভিঞ্চি শেখেন  ফাজিয়োর কাছে। চিয়ারা  মেচেরি ও ফাজিয়োর বিয়ে   আইনসিদ্ধ ছিল না  অর্থাৎ তারা বিয়েতে রেজিস্ত্রি করেন নি। তাই তাঁদের  প্রিয় সন্তানকে সারা জীবন বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ল্যাটিন ভাষায় তিনি নিজের নাম লিখতেন হিরোনমাস কারডানস। ইংরেজরা তাঁকে ডাকতেন জেরোম  কারদান। কিন্তু তাঁর প্রকৃত নাম ছিল গিরোলামো কারদানো। শৈশবে পিতার কাছে গনিতের শিক্ষা নিতেন। ফাজিয়ো চেয়েছিলেন ছেলে বড়ো হয়ে তাঁর মতো আইন ব্যবসায়ী হবেন। কিন্তু শৈশবে দারিদ্র্যের যে  ভয়াল দৃশ্য দেখেছেন তাতে তিনি বুঝেছিলেন আইন ব্যবসা থেকে যথেষ্ট উপার্জন সম্ভব নাও হতে পারে। তাই স্থির করেন তিনি ডাক্তার হবেন। ফলে পিতার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারিতে ডিগ্রী নিয়ে মিলান শহরে ফিরে এসে প্র্যাকটিস শুরু করার জন্য লাইসেন্সের আবেদন করেন । কিন্তু বাবা-মায়ের বৈধ বিয়ে হয় নি এবং তিনি কলহ  প্রিয়  হওয়ার অজুহাতে  তাঁর আবেদন বাতিল হয়ে যায়। লাইসেন্স না পেলেও কারদানো পাদুয়া থেকে প্রায় 15 কিলোমিটার দূরে  এক অতি ক্ষুদ্র গ্রাম স্যাকোলংগোতে গোপনে রুগিদের চিকিৎসা চালিয়ে      যান। এরূপে গোপনে রুগিদের চিকিৎসা-পরিসেবা চালিয়ে যাওয়ায়   তাঁর  উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলেও তাঁর আয় না বাড়ায় স্ত্রী লুসিয়া কে নিয়ে আর্থিক সমস্যায় পড়েন। ফলে স্যাকোলংগো (Saccolango) শহরে প্র্যাকটিস      ছেড়ে দিয়ে মিলন শহরের নিকটবর্তী গাল্লারেট (Gallarate) এ চিকিৎসা  পরিষেবা দিতে শুরু করেন। বার কয়েক নাচক হওয়ার পর মিলান শহরের  প্রশাসন মঞ্জুর করেন তাঁর ডাক্তারির লাইসেন্স। কারণ ? প্রশাসনের এক   কর্তার শিশুপুত্রকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। খুব দ্রুত কারদানো হয়ে ওঠেন মিলান শহরের এক নম্বর ডাক্তার। তাঁর খ্যাতি দ্রুত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিলেতেও। রাজা, মহারাজা বা দেশ বিদেশের  প্রধানরা  তাঁকে কল করে নিয়ে যেতেন নিজের দেশে। ফলে তাঁদের চড়া হারে দক্ষিণা (ভিজিট) তাঁকে দিতে হোত। এই সমস্ত ক্ষেত্রে দক্ষিণা ছিল হাজার স্বর্ণমুদ্রা। আশ্চর্য পেশায় চিকিৎসক হয়েও তিনি ছিলেন রীতিমতো  কুসংস্কারচ্ছন। বিশ্বাস করতেন এমন অনেক কিছুতে যা আমাদের চুড়ান্ত   হাসির উপাদান হতে পারে। আসলে নানারকম   কুসংস্কার ছিল সে যুগের নিয়ম। এই নিয়মের বাইরে ছিলেন না রাজা, মহারাজা, বিজ্ঞানী কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানী তিনি আধি- ভৌতিক শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। জীবনে দুবার বড়সড় নৌকাডুবির হাত থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। তাও নাকি   ওই    জন্যও। কারদানোর মতে , জীবনে সব বড়ো ঘটনার পূর্বাভাস তিনি  স্বপ্নে পেতেন। এক রাত্রে স্বপ্নে তাঁর সঙ্গে দেখা হল এক মহিলার। সাতদিন পর এক পার্টিতে দেখা হুবহু সেরকম চেহারার একটি মেয়ের সঙ্গে।  কারদানো বিয়ে করেন তাঁকে।  জ্যোতিষ চর্চায় এক নতুন বিভাগ আবিস্কার করেছেন। কি ? মেটোপোসকপি মানুষের কপালে ভাঁজ দেখে তাঁদের চরিত্র অথবা ভাগ্য বিচার। জ্যোতিষীর কাজেও তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। অন্যান্য জ্যোতিষীর মতোই এ ব্যপারে তাঁর কেরামতি ছিল হাস্যকর।  ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি নির্দেশ দিলেন তাঁর ছেলে ষষ্ট এডওয়ার্ডের  ঠিকুজি তৈরী করে দিতে হবে। কারদানো তৈরী করে দিলেন সেই ঠিকুজি।  কি আছে তাঁর সন্তানের ভাগ্যে ? কারদাগো জানালেন ২৩, ৩৪ ও ৫৫ বছর বয়সে সামান্য কিছু রোগ ভোগ বাদ দিলে এডওয়ার্ডের লম্বা আয়ু। হায় গননাকারী । মাত্র ১৬ বছর বয়সে মারা গেলেন  রাজপুত্র। এমন জ্যোতিষীর কঠোরতম সাজা হওয়ার কথা কিন্তু কারদানোর কোনো শাস্তি   হয় নি। কারন তিনি তখন একজন বিখ্যাত ডাক্তার। তাঁর শাস্তি হলে দেশের মানুষ খেপে যাবে। কারদানো ছিলেন একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ্‌তাঁর হাত ধরেই পদার্থ   বিদ্যার অতি গুরুত্বপূর্ণ শাখা কোয়াণ্টাম মেকানিক্স এর সৃষ্টি। পুরো   ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি , এমন কি  আজকের ইনফর্মেশন টেকনোলজি বিপ্লব সব এসেছে এই  কোয়াণ্টাম মেকানিক্স-এর গবেষণার ফলে। আর এরুপ বিষয়ের গানিতিক ভিত্তি হল দুটি জিনিস।  প্রথমতঃ কাল্পনিক   সংখ্যা বাঁ জটিল সংখ্যা (Complex Number)
(ii) নং থেকে b =              
অর্থাৎ সংখ্যা দুটি হলো   ও     দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে কোন বাস্তব সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু উত্তর নির্ভুল; কারন তাদের গুনফল = +   = 0
তাহলে,     সংখ্যাটি কিরূপ?  
কারণ 2 X 2 = 4 : কিন্তু (-4) কোন দুটি একই সংখ্যার গুনফল? অর্থাৎ কোনো বাস্তব সংখ্যার বর্গ ঋনাত্বক হতে পারে কি? তেমন কোনও বাস্তব সংখ্যা নেই? নেই বলেই      সংখ্যাটি কে কাল্পনিক সংখ্যা বা জটিল সংখ্যা বলা হয় (Imaginary or Complex Number) জটিল রাশিকে a + ib আকারে প্রকাশ করা হয়, যেখানে a  ও b  বাস্তব এবং   ।  এরুপ আকার কারদানো  1545 সালে প্রথম প্রকাশ করেন। কিন্ত   চিহ্নটি প্রথম ব্যবহার করেন L. Euler  (1707-1783) . যেমনঃ 2+3i একটি জটিল রাশির উদাহরন। এই প্রকার সংখ্যার দুটি অংশ, একটি বাস্তব অংশ (2) এবং অপরটি কাল্পনিক  অংশ(3)আপাতদৃষ্টিতে এরুপ সংখ্যা হেয়ালীভরা কিন্তু বেশ রোমহর্ষক। এমন সংখ্যার অস্তিত্ব প্রমানিত না হলে, কারদানোর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হোত না। জটিল সংখ্যার ভাবনা কোয়ান্টাম মেকানিকের সৃষ্টির মূল  উপকরন। দ্বিতীয়তঃ সম্ভাবনার তত্ত্বঃ আলোচনায় দেখা যায় , জুয়া খেলার নেশা  থেকেই কারদানো মেতে উঠেছিলেন সম্ভাবনার  গনিতে।  জুয়ায় থাকে ছক্কা; যার ছটি তলে ছয়টি বিভিন্ন সংখ্যা। ছক্কা নিক্ষেপ করলে কোন একটি সংখ্যা পড়বে। ধরা যাক্‌ সংখ্যাটি 3; তাহলে 3 পড়ার সম্ভাবনা কত? ছক্কা নিক্ষেপ করলে 1 থেকে 6 পর্যন্ত যে কোনও সংখ্যা পড়তে পারে। তাই  তাদের মধ্যে ঐ নির্দিষ্ট সংখ্যাও পরার সম্ভাবনা হবে 6 এর মধ্যে 1 (এক) অর্থাৎ  , এটাই হল 3 পরার সম্ভাবনা। এমন জুয়া খেলা হয়  নানাভাবে। তাতে ঠকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে কারদানো সবাইকে পরামর্শ দিতেন কীরকম? উদাহরনের সাহায্যে বিষয়টি বোঝানো যাক। ধরা যাক্ দুজন জুয়াড়ি । খেলা হবে চামড়ার তৈরী গ্লাস থেকে তিনটি ছক্কা  ফেলে। ছজন ঠিক করলো বাজি ধরা হবে এভাবে। গ্লাস থেকে তিনটি ছক্কা  বোর্ডে ফেলার পর যে তিনটি সংখ্যা পাওয়া যাবে তাদের সমষ্টি 9 হলে একজনের জিত । আর সমষ্টি 10 হলে অন্যজনের জিত। আর সমষ্টি অন্য কোনও সংখ্যা হলে কারও হার বাঁ জিত হবে না। এমন নিয়মে বাজি ধরা  কি ঠিক? আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় ঠিকই তো কেননা সমষ্টি 9 হওয়ার  6 টি উপায়। আবার সমষ্টি 10 হওয়ার ও 6 টি উপায়। অর্থাৎ সমষ্টি 9 হওয়ার উপায়গুলি হল (1,2,6 ) , (1,3,5), (1,4,4 ), (2,2, 5), (2,3,4 ) ও  (3,3,3) আবার সমষ্টি হওয়ার উপায়গুলি হল (1, 3, 6) , (1,4,5), (2,4, 4),   (2,2, 6) ,  (2,3,5), (3,3,4) তিনটি ছক্কায় আলাদা সংখ্যা পড়বে কিন্তু তাদের সমষ্টি হবে 9, এমন সম্ভাবনার জন্য সংখ্যাগুলি 3 প্রকারের হবে। যথাঃ (1,2,6) , (1,3,5)  ( 2,3,4)যেহেতু সংখ্যাগুলি আলাদা, তাই ঐগুলির প্রত্যেকটির জন্য দান  পড়ার সম্ভাবনা 6 রকম। অতএব উহাদের জন্য মোট দানের সম্ভাবনার সংখ্যা (3X6) = 18 রকম। যদি দুটি ছক্কায় একই সংখ্যা পরে, কিন্তু তাদের সমষ্টি 9 হবে এরুপ সংখ্যা 2 প্রকারের। যথাঃ ( 2,2,5), (1,4,4)অতএব ওদের জন্য মোট দানের সম্ভাবনা (3X2) = 6 রকম।  আর তিনটি ছক্কায় একই সংখ্যা পড়বে কিন্তু তাদের সমষ্টি হবে 9 এরুপ দানটি হবে (3,3,3)তাহলে সমষ্টি 9 হওয়ার জন্য মোট দানের সম্ভাবনা সংখ্যা = (18+16+1) = 35 কিন্তু 3 টি ছক্কা থেকে মোট দানের সংখ্যা ( 6 X 6 X 6) = 216 রকম। তাহলে দেখা যাচ্ছে ঐ দান সংখ্যার মধ্যে সমষ্টি 9 এর উপযোগী দানগুলির সমষ্টি = 25 সুতরাং সমষ্টি 9 হওয়ার সম্ভাবনা =                                                                                                                      কিন্তু সমষ্টি 10 এর বেলায় কি হবে? এ ক্ষেত্রে তিনটি সংখ্যা আলাদা হবে যদি সেগুলি ( 2, 3,5) , (3, 1, 6) এবং (4,1,5) হয়, দুটো সংখ্যা অভিন্ন হতে পারে যদি সেগুলি (3,3,4) , (2,2,6) (4,4,2) হয়। আর তিনটি একই সংখ্যা পরে সমষ্টি 10 হতে পারে, এমন কোনো দান হতে পারে না। তাহলে সমষ্টি 10 হবে, এমন দানের সম্ভাবনা হবে ( 3X6 + 3X3) = 27 রকম। অতএব এক্ষেত্রে দান পড়ার সম্ভাবনা
অর্থাৎ সমষ্টি 10 হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য হলেও বেশি। জুয়াড়িদের উদ্দেশ্যে কারদানোর সতর্কবানী বাজি সমান সমান অর্থাৎ সমষ্টি 9 বা 10 হলে একই পরিমান অর্থ প্রাপ্তি , এরুপ শর্তে জুয়া খেলবেন না। যদি সমষ্টি 9 এর পক্ষে থাকেন তাহলে আপনি হারবেন। যদি খেলতেই হয় তাহলে সমষ্টি 9 এর বিপক্ষে অর্থাৎ সমষ্টি 10 এর জন্য বেশি অর্থ দাবী করবেন। তাই বলা যায় সম্ভাবনার এরূপ গণিতই তৈরী করেছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ভিত।
গণিত বিজ্ঞানী হিসাবে কারদানোই সর্বপ্রথম ঋনাত্নক সংখ্যাগুলিকে পদ্ধতিগতভাবে ব্যবহার করেন। Scipione del Ferro (1526 খ্রিস্টাব্দ  পর্যন্ত Bologna বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ) ত্রিঘাত সমীকরণের  সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিলেম এবং তাঁর ছাত্র Lodovico de Ferrari ( Italian mathematician) চতুর্ঘাত (quartic)  সমীকরনের সমাধানের কৌশল জানতেন, তা   কারদানোই প্রথম প্রকাশ করেন। 1545 খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত বীজগনিত   বিষয়ক তাঁর  বিখ্যাত গ্রন্থ আরস ম্যাগনাতে তিনি ত্রিঘাত সমীকরনের  সমাধান কৌশল  নিয়ে আলোচনা করেন এবং কাল্পনিক বা জটিল সংখ্যার সংজ্ঞা দেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর সমসাময়িক ইতালিয়ান গণিতজ্ঞ রাফেল বোমবেল্লি কাল্পনিক সংখ্যায় সর্বপ্রথম  প্রতীক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ A algebra Parte maggiore de  arithmetica devisa in trilibri’ তে ব্যবহার করেন।   
তিনি তাঁর বিখ্যাত গণিত বিষয়ক গ্রন্থ In Opus novum de Proportionbusতে দ্বিপদ সহগ সমূহ ও দ্বিপদ উপপাদ্য প্রচলন  করেছেন। জুয়া খেলার প্রতি তিনি এতো অনুরক্ত ছিলেন যে তিনি “Liber  de oludo aleae” নামক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং সেটি 1664 খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। (লেখার প্রায় 100 বছর পর)।
নিকালো ফোন্তানা তার্তাগলিয়া (Nicolo Fontana Tartagolia) ভেনিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপকের সঙ্গে কারদানোর ঝগড়া গণিতমহলে  স্মরণীয় হয়ে আছে। এই ঝগড়াটি কি নিয়ে তা আলোচনা  করা যাক। 3x + 5 = 0 সমীকরনটি একঘাত সমীকরন , কারন এতে x এর ঘাত বা পাওয়ার হল এক । তেমন  হল একটি দ্বিঘাত সমীকরণ এখানে x এর সর্বোচ্চ ঘাত 2 এরূপ একঘাত বাঁ দ্বিঘাত সমীকরনের সমাধান কৌশল প্রাচীনযুগে ভারত ও আরবের  গণিতজ্ঞরা জানতেন। কিন্তু ত্রিঘাত সমীকরন যেমন,  এর সমাধান (অর্থাৎ x এর মান) কি হবে? ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপের গণিতজ্ঞরা এই সমাধান পদ্ধতি নির্ণয়ের জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন2 জন এব্যাপারে আংশিক সফল হল। একজন হলেন ভেনিশের আন্তোনিয়া মারিয়া ফিয়র (Antonie Marie Fiere)  আর অপর একজন হলেন তার্তাগলিয়া । যেমন ফিয়র সমাধান করেছেন  আকারের  সমীকরণ। এখানে সমন্বিত কোনও পদ নেই। কিন্তু তাতাগলিয়া সমাধান করেন     এবং    এই দুই আকারের সমীকরন।  এখানে প্রথম সমীকরনটিতে x-যুক্ত  পদ নেই। আবার দ্বিতীয়টিতে   সম্বনিত পদ নেই অর্থাৎ ,  এবং x- যুক্ত  পদ নিয়ে গঠিত  সমীকরণ সমাধান করতে কেউই সক্ষম হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁরা মুখোমুখি হন তর্কযুদ্ধে। সেকালে এটাই ছিল রীতি। তখন ছিল না কোনো জার্নাল ( দিনপঞ্জী)। বিজ্ঞানী বিশেষত গণিতজ্ঞরা কিছু আবিস্কার করলে তা সযত্নে লুকিয়ে রাখতেন প্রথমে। সবাই নিজের কৃতিত্ব জানাতে নিতেন বিভিন্ন পন্থাঅন্য পণ্ডিতকে মুখোমুখি তর্ক যুদ্ধে আহ্বান জানাতেন। তোমার কাছে আছে কি এই সমস্যার সমাধান। তাহলে দেখাও। এভাবে কৃতিত্ব প্রমানিত হলে সুনাম বাড়তো। ফলে রাজা মহারাজাদের দরবারে মোটা মাইনের চাকরি জুটটো। ফিয়র তার্তগলিয়া তর্ক যুদ্ধে অবশ্যই উঠল ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধান প্রসঙ্গ। এতে অবশ্যই তার্তাগলিয়া এগিয়ে ছিলেন। ফলে যুদ্ধে জিতলেন ও তিনি। এরূপ সময়ে কারদানোর আসরে প্রবেশ। তিনি লিখতে চলেছেন বীজগণিতের সেরা উপহার আরস ম্যাগনাবইটিতে লিখতে চান ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধানের কৌশলতাই কারদানো অনুরোধ জানালেন তার্তাগলিয়াকে তার উদ্ভাবিত কৌশল প্রদান  করতো। অনেক খোসামোদের পর তার্তাগলিয়া রাজি হলেন এক শর্তে  আগে তার্তাগলিয়া নিজের বই ছেপে তার সমাধান কৌশল  ব্যাখ্যা করার পর কারদানো ছাপতে পারবেন তার বই। শর্তে রাজী  কারদানো । কিন্তু আরস ম্যাগনা ছাপানোর ন্সময় কথা রাখলেন না তিনি। এই ব্যাথার কারন এই  যে ততোদিনে তিনি  নিজে বের করে ফেলেছেন চতুর্ঘাত যথাঃ
 আকারের সমীকরনের সমাধান কৌশলযে ব্যপারে কাজে লাগে ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধান কৌশল। চুক্তিভঙ্গ করে আরস ম্যাগনা ছেপেই ক্ষান্ত হলেন না কারদানো। বইয়ে  তিনি আবার ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধান কৌশল নির্ণয়ের কৃতিত্ব তার্তাগলিয়ার চেয়ে ফিয়রকে বেশি দিলেন। আর যায় কোথা,  রেগে অগ্নিশর্মা তার্তাগলিয়া একের পর এক লেখায় গালা-গাল দিতে লাগলেন  কারদানোকে । শুরু হল স্মরণীয় ঝগড়া। একে ঐতিহাসিক যুদ্ধও বলা চলে।
1531 খ্রীষ্টাব্দে মাত্র 31 বছর বয়সে লুসিয়া বন্দরিনী কে বিয়ে করেন। স্ত্রী লুসিয়া 1546  খ্রীষ্টাব্দে মারা যান। তাঁদের দাম্পত্য জীবন খুব বেশীদিন  স্থায়ী হয় নি। তিনি ছিলেন দক্ষ জুয়াড়ী এবং বিখ্যাত চিকিৎসক। খুব উচ্চাকাঙ্খী হওয়ার দরুন সংসারের প্রতি উদাসিন থাকতেন। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। বড় ছেলে গিয়াম বাতিস্থা ( ডাক্তার ছিলেন) তার নিষেধ অগ্রাহ্য করে ডাক সাইটে সুন্দরী কিন্তু উগ্রস্বভাবের একটি মেয়েকে  বিয়ে করেন। বিয়ের পর সংসার করতে গিয়ে ঝগড়া। গিয়াম বাতিস্তা বিষ খাইয়ে স্ত্রীকে মেরে ফেলেন। ধড়া পড়ে, তার বিচার হয়। শাস্তি প্রাণদণ্ড (1560 সালের  13 ই এপ্রিল)। গর্দান যায় 26 বছর বয়সি যুবকের। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুশোকে দারুনভাবে ভেঙ্গে পরেন তিনি। এদিকে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ধুরন্ধর তার্তাগলিয়ার প্রলোভনে ততদিনে বশ হয়েছে কারদানোর ছোট ছেলে আলডো।   
বাবার সব গতিবিধি জানিয়ে দিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী তার্তাগলিয়াকে। জানিয়ে দিয়েছে এই তথ্যও যে বাবা একদা তৈরী করেছিলেন যিশুখ্রিস্টের ঠিকুজি।  যা থেকে প্রমানিত হয়, জিশু মানুষটি মোটেই সাধুসন্ত ছিলেন না। এতো ঘোর পাপ। তার্তাগলিয়া জানিয়ে দেন চার্চকে। কারদানো দোষী সাবস্ত হল এবং বিচারে তাঁকে দারুন ভৎসনা করা হয়।
শেষ জীবন তাঁর ভালো কাটে নি। স্ত্রী হত্যার দায়ে অপরাধী সন্তানের পিতা হওয়ায় তাঁকে অনেক অপমান ও লাঞ্ছনা ভুগতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর আত্নজীবনীতে লিখেছেন The four greatest sadness in my life ; The first was my marriage ; the second the bitter death of my son ; The third, imprisonment ; the fourth , the base character of my youngest son.
বিচিত্রতায় পরিপূর্ণ এই মহান গণিতজ্ঞ , চিকিৎসক, জ্যোতিষী, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ সর্বোপরি বিখ্যাত জুয়াড়ি 1576 খ্রীস্টাব্দের 20 শে সেপ্টেম্বর এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অমৃতের পথে যাত্রা করেন। আশ্চর্য্য, জ্যোতিষী হিসাবে মৃত্যুর তারিখটি কিন্তু বহু আগেই ঘোষণা করেছিলেন। তাই অনেকের ধারনা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি তাঁর। তিনি পান করেছিলেন বিষ। কিন্তু কেন? আবার কেন? জ্যোতিষী হিসাবে নিজের ভাগ্য-গননা নির্ভুল প্রমান করতেই এই পদক্ষেপ। তিনি ছোট বড়ো মিলিয়ে মোট প্রায় 200 টি বই লিখেন। 

Comments

Popular posts from this blog

Sample Paper for ISI Entrance Examination 2019

Origin and evolution of trigonometry